সিজারিয়ান বা কোমরের নিচের অংশে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে তা বাড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে এফিড্রিন হাইডোক্লোরাইড ইনজেকশন দেন চিকিৎসকরা। মাত্র ১২ টাকা দামের এ ইনজেকশনটি রোগীর জীবন রক্ষায় খুবই প্রয়োজনীয়।
অথচ বছরখানেক ধরে কোনো কারণ ছাড়াই ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও কোনো দোকানে পাওয়া যায়, সেটির দাম নেওয়া হচ্ছে ১২ টাকার জায়গায় এক হাজার টাকারও বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধটির জন্য ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে।
ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এমনকি সময় মতো ইনজেশনটি পাওয়া না যাওয়ায় অনেক রোগী মারাও যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলোয় খোঁজাখুঁজি করেও এফিড্রিন হাইডোক্লোরাইড ইনজেকশনটি পাওয়া যায়নি। দোকানদাররা বলছেন, ওষুধটি বছরখানেক ধরে বাজারে নেই। কোনো দোকানে এটি পাওয়া গেলে জরিমানা করা হয়। এ কারণে তারা ওষুধটি বিক্রি করছেন না। তবে রোগীর লোকজন এসে প্রতিদিন ওষুধটি খোঁজ করেন।
ঢামেক হাসপাতালের এসএলপিপি ডা. মশিউর রহমান বলেন, সিজারিয়ান এবং কোমরের নিচের অংশে অস্ত্রোপচারের সময় এফিড্রিন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। এটি এখন আমাদের হাসপাতালে সরবরাহ নেই। অথচ ইনজেকশনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধটি না থাকায় রোগীদের অনেক সমস্যা হয়। তবে কোনো কোনো রোগীর স্বজন নিজ উদ্যোগে এটি সংগ্রহ করেন। শুনেছি তারা এটি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দিয়ে কিনে আনেন। ওষুধটি একেবারে সহজলভ্য করা দরকার।
বিএসএমএমইউর অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পন্ন ও কম মূল্যের ওষুধ এফিড্রিন ইনজেকশন। কিন্তু এটি পাওয়া যাচ্ছে না, যা খুবই দরকারি। এফিড্রিন ট্যাবলেট আন্তর্জাতিকভাবে অ্যাজমার জন্য ব্যবহার করা হয়। ট্যাবলেটটি খেলে ইয়াবার মতো মনে হয়। কিন্তু ইনজেকশন মাদকদ্রব্যের মতো ব্যবহারের সুযোগ নেই। কেউ যদি ইনজেকশনটি এমনিতে ব্যবহার করেন তা হলে তিনি মারা যাবেন।
সুতরাং ইনজেকশনটি মাদকের মতো ব্যবহার করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে এফিড্রিনের কাঁচামাল ব্যবহার করে কেউ ট্যাবলেট বানাতে চেয়েছিল। তাই এটি মাদকদ্রব্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে এর উৎপাদন ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি রয়েছে। অথচ এফিড্রিন ইনজেকশন খুবই কম দামি ওষুধ। টাকা খরচ করে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এনে ওষুধ কোম্পানিগুলো এ ইনজেকশন তৈরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ওষুধটি দেশে সহজলভ্য না হওয়ায় অনেকে চোরাইপথে ভারত থেকে এটি নিয়ে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, রোগীদের স্বার্থে এ ইনজেকশন সহজলভ্য করা দরকার। বিষয়টি আমরা ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এফিড্রিন হাইডোক্লোরাইডের কাঁচামাল আমদানি করতে হলে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। তাই এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। এটি কেটে যাবে। এফিড্রিনের কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে এসিআই, গণস্বাস্থ্য ও ডেল্টা নামের তিনটি কোম্পানিকে এফিড্রিন হাইডোক্লোরাইড আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কোম্পানি একসঙ্গে ১০ কেজির বেশি আমদানি করতে পারবে না।